ডেস্টিনেশন পার্শ্বনাথ
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৪৮০ ফুট উঁচু পরশনাথ পাহাড় ছোটনাগপুর মালভুমি- ঝাড়খন্ড রাজ্যের সর্বোচ্চ পাহাড় এবং জৈন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম পবিত্র তীর্থস্থান।
জৈন ধর্মের ২৪জন তীর্থঙ্করের মধ্যে ২৩জন (দ্বিমতে ২০জন) এই পাহাড়ে নির্বাণলাভ করেছিলেন। ২৩তম তীর্থঙ্কর ছিলেন পার্শ্বনাথ স্বামী।তাঁরই নামানুসারে এই পাহাড়ের নাম পরশনাথ পাহাড়।
এছাড়া শিখরজী,সম্মেদ শিখর নামেও পরিচিত।সাঁওতাল সম্প্রদায়ের কাছে এই পাহাড় মারাং বুরু হিসেবে পূজিত হয়। এই পাহাড় পরিক্রমা শুরু হয় পাহাড়ের নিচে ছোট্ট একটি জনপদ মধুবন থেকে। মধুবন হল এই পাহাড়ে প্রবেশদ্বার।
চলুন দেখে নেওয়া যাক পরেশনাথ ঘুরতে গেলে কী কী জানা দরকার ------
- অবস্থান:- ঝাড়খণ্ডের পরশনাথ স্টেশন থেকে ২৪কিমি ও ধানবাদ শহর থেকে ৭৪কিমি দূরে মধুবন।
- যাতায়াত:- হাওড়া,শিয়ালদা ও কলকাতা স্টেশন থেকে অনেক ট্রেন আছে পরশনাথ স্টেশন যাওয়ার । স্টেশনে নেমে শেয়ার গাড়ি(৭০টাকা মাথাপিছু) অথবা রিজার্ভ গাড়ি(৫০০টাকা) করে পৌঁছে যাওয়া যায় মধুবন।
- থাকা :- মধুবনে থাকার জন্য দু-চারটে হোটেল ছাড়া অনেক জৈন ধর্মশালা আছে। রুম হিসাবে ভাড়া মোটামুটি ৫০০টাকা থেকে ৩০০০টাকার মধ্যে। নন-এসি ,এসি সবরকম রুম পাবেন।
- খাওয়া:- ধর্মশালায় খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। ব্রেকফাস্ট,লাঞ্চ এবং সন্ধ্যের খাবার। সন্ধ্যে ৬টার পর কোনো খাবার জৈন ধর্মশালায় পাবেন না। (জৈন ধর্মাবলম্বীরা সূর্যাস্তের পর আর আহার করেন না)। তাই রাত্রে খাবার খেতে চাইলে বাইরে হোটেল থেকে খেতে হবে।
এবার মূল কথা অর্থাৎ পাহাড় পরিক্রমার ট্রেক :-
মধুবন থেকে হাঁটা শুরু করে পাহাড় পরিক্রমা করে মধুবন ফিরে আসা পর্যন্ত মোট রাস্তা ২৭কিমি।
মধুবন থেকে যাত্রা শুরু করে প্রথমে পড়বে কালিকুন্ড,গন্ধর্ব নালা তারপর
শীতলনালা(৫কিমি)।এই শীতলনালা থেকে রাস্তা দুভাগ হয়েছে --একটা পার্শনাথ
স্বামী টঙ্কের দিকে।শুধুমাত্র যার পার্শনাথ স্বামী টঙ্ক দর্শন করবেন তারাই
এই রাস্তা ধরবেন। রাস্তা যথেষ্ট চড়াই।
যারা পুরো পরিক্রমা করবেন তারা শীতলনালা থেকে সোজা রাস্তা গেছে সেটা ধরবেন।পৌঁছবেন গৌতম স্বামী টঙ্ক,মধুবন
থেকে ৯কিমি। এটাই পাহাড় পরিক্রমার মধ্য পয়েন্ট। গোটা পাহাড় জুড়ে ৩০টি
টঙ্ক/বা সমাধি মন্দির আছে। এই টঙ্কগুলো বিগ্রহহীন। বিভিন্ন তীর্থঙ্করের
পাথরে খোদিত পদচিহ্ন আছে প্রত্যেক টঙ্কে।
আর আছে একটি মন্দির- নাম জলমন্দির ।শুধুমাত্র এখানেই বিগ্রহ আছে। গৌতম স্বামী টঙ্কের পূর্বদিকে আছে ১৯টি টঙ্ক ও পশ্চিম দিকে আছে ১১টি টঙ্ক। গৌতম স্বামী থেকে দক্ষিণে ১কিমি দূরে রয়েছে জল মন্দির। পূর্বে চন্দ্রপ্রভু স্বামী টঙ্ক থেকে পশ্চিমে পার্শনাথ স্বামী টঙ্ক--এই ৩০টি টঙ্ক ও জলমন্দির দেখার জন্য রাস্তা প্রায় ৯কিমি।
এই রাস্তা চড়াই উৎরাই মিলিয়ে। সমস্ত টঙ্ক দর্শন করে একদম শেষে পৌঁছতে হবে পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত অন্যতম আকর্ষণ ২৩তম তীর্থঙ্কর পার্শনাথ স্বামী টঙ্ক। পার্শনাথ স্বামী টঙ্ক থেকে মধুবন পর্যন্ত উৎরাই রাস্তা ৯কিমি।
মিশ্র প্রকৃতির পাহাড়ি জঙ্গলের নিঝুম পথ এই প্রায় ৩০কিমি রাস্তা কমপ্লিট করতে সময় লেগে যাবে প্রায় ১২-১৪ঘন্টা (তাড়াহুড়ো না করে,ধীরে সুস্থে,খাওয়া-দাওয়া করে,রেস্ট নিয়ে)। ভোর ৩/৪টেয় হাঁটা শুরু করলে সন্ধে ৭টার মধ্যে মধুবন পৌঁছে যাওয়া যাবে।
১) রাস্তায় মাঝে মাঝে খাবারের দোকান।মাঝে মাঝে দেখা যাবে গাছেদের সঙ্গে সংসার পেতেছে হনুমান,বানরের দল।
২) পাহাড়ের উপর রাত্রিবাসের ব্যবস্থা একটি। গৌতম স্বামী টঙ্কের পাশে। যদি কেউ পাহাড়ের উপর রাত্রিবাস করতে চান তাহলে মধুবনে জৈন শেতাম্বর সোসাইটি থেকে অনুমতি নিতে হবে। সেই অনুমতি পত্র উপরে দেখালে তবেই আপনি থাকতে পারবেন।
৩) কেউ হেঁটে যেতে না চাইলে মধুবন থেকে ডোলি/বাইক বুক নিতে পারেন।
বাইকে গেলে আপনাকে পার্শনাথ স্বামী টঙ্কের কাছে নামিয়ে দেবে। এবার বাকি পরিক্রমা আপনাকে হেঁটে করতে হবে।
ডোলি দুরকমের :- প্লেন ডোলি (২৫০০টাকা) আর কুর্সি ডোলি(৪৫০০টাকা)। দরাদরি করতে পারেন।
তীর্থযাত্রী আর ভ্রমণার্থী দুইয়ের কাছেই অতি পবিত্র ও মনোরম এই পরশনাথ পাহাড়।
No comments:
Post a Comment